History of Bangladesh
|Bangladesh
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাংবিধানিক নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়, পূর্ব সীমান্তে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে মিয়ানমারের চিন ও রাখাইন রাজ্য এবং দক্ষিণ উপকূলের দিকে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।ভৌগোলিকভাবে পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপের সিংহভাগ অঞ্চল জুড়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ড অবস্থিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উপর দিয়ে বয়ে গেছে ৫৭টি আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে ও দক্ষিণ-পূর্বে টারশিয়ারি যুগের পাহাড় ছেয়ে আছে। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন ও দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সৈকত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশে অবস্থিত।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বাংলাদেশ
![The national flag of Bangladesh, was adopted officially on 17 January 1972. It consists of a red disc on top of a dark green banner. The red disc is offset slightly toward the hoist so that it appears centered when the flag is flying. While there are many interpretations, according to Shib Narayan Das who put the map on the first flag design, green on the flag represented the landscape and the red circle represented the sun, symbolising a new day and end of oppression. [1]
The flag is based on a similar flag used during the Bangladesh Liberation War of 1971, which had a yellow map of the country inside the red disc. In 1972 this map was removed from the flag. One reason given was the difficulty for rendering the map correctly on both sides of the flag.[2] The civil ensign and naval ensign place it in the canton of a red or white field, respectively.](https://www.besttourismplaces.com/wp-content/uploads/2022/03/বাংলাদেশের-জাতীয়-পতাকা-1024x614.jpg)
দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন ও ধ্রুপদী যুগে বাংলাদেশ অঞ্চলটিতে বঙ্গ, পুণ্ড্র, গৌড়, গঙ্গাঋদ্ধি, সমতট ও হরিকেল নামক জনপদ গড়ে উঠেছিল। মৌর্য যুগে মৌর্য সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ ছিল অঞ্চলটি। জনপদগুলো নৌ-শক্তি ও সামুদ্রিক বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল। মধ্যপ্রাচ্য, রোমান সাম্রাজ্যে মসলিন ও সিল্ক রপ্তানি করতো জনপদগুলো। প্রথম সহস্রাব্দিতে বাংলাদেশ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পাল সাম্রাজ্য, চন্দ্র রাজবংশ, সেন রাজবংশ গড়ে উঠেছিল। বখতিয়ার খলজীর গৌড় জয়ের পরে ও দিল্লি সালতানাত আমলে এ অঞ্চলে ইসলাম ছড়িয়ে পরে। ইউরোপীয়রা শাহী বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী বাণিজ্য দেশ হিসেবে গণ্য করতো।

মুঘল আমলে বিশ্বের মোট উৎপাদনের (জিডিপির) ১২ শতাংশ উৎপন্ন হতো সুবাহ বাংলায়, যা সে সময় সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের জিডিপির চেয়ে বেশি ছিল। ১৭৬৫ থেকে ১৯৪৭ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভূখণ্ডটি প্রেসিডেন্সি বাংলার অংশ ছিল। ১৯৪৭-এর ভারত বিভাজনের পর বাংলাদেশ অঞ্চল পূর্ব বাংলা (১৯৪৭–১৯৫৬; পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৫৬–১৯৭১) নামে নবগঠিত পাকিস্তান অধিরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ পর্যন্ত বাংলা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ হলে পশ্চিম পাকিস্তানের বিবিধ রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ভারতের সহায়তায় গণতান্ত্রিক ও সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তান বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় ঘটেছে দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ; এছাড়াও প্রলম্বিত রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও পুনঃপৌনিক সামরিক অভ্যুত্থান এদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বারংবার ব্যাহত করেছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে যার ধারাবাহিকতা আজ অবধি বিদ্যমান। সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গত দুই দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রগতি ও সমৃদ্ধি সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ও মন্ত্রণালয়সমূহের সীল

জনসংখ্যায় বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম দেশ বাংলাদেশ, যদিও আয়তনে বিশ্বে ৯৪ তম। ৬টি ক্ষুদ্র দ্বীপ ও নগররাষ্ট্রের পরেই বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশ। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইলেরও কম এই ক্ষুদ্রায়তনের দেশটির প্রাক্কলিত (২০১৮) জনসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি অর্থাৎ প্রতি বর্গমাইলে জনবসতি ২৮৮৯ জন (প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১১৪০ জন)।দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৯৯% মানুষের মাতৃভাষা বাংলা; সাক্ষরতার হার প্রায় ৭৫.২% ।

২০১৭–১৮ অর্থবছরে চলতি বাজারমূল্যে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পরিমাণ ছিল ২২,৫০,৪৭৯ কোটি টাকা (২৬১.২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার), যা ২০১৮–১৯ অর্থবছরে বৃদ্ধি লাভ করে ২৮৫.৮২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নীত হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে।২০১৭–১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় ছিল ১৭৫২ ডলার। সরকার প্রাক্কলন করেছে যে, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ১৯৫৬ ডলার বা ১ লাখ ৬০ হাজার ৩৯২ টাকা।দারিদ্রের হার ২০.৫ শতাংশ, অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা ১০.৫ শতাংশ এবং বার্ষিক দারিদ্র হ্রাসের হার ১.৫ শতাংশ। এই উন্নয়নশীল দেশটি প্রায় দুই দশক যাবৎ বার্ষিক ৫ থেকে ৬.২ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অর্জনপূর্বক পরবর্তী একাদশ অর্থনীতিসমূহের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। রাজধানী ঢাকা ও অন্যান্য শহরের পরিবর্ধন বাংলাদেশের এই উন্নতির চালিকাশক্তিরূপে কাজ করছে। এর কেন্দ্রবিন্দুতে কাজ করেছে একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ত্বরিত বিকাশ এবং একটি সক্ষম ও সক্রিয় উদ্যোক্তা শ্রেণির আর্বিভাব। বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প সারা বিশ্বে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। জনশক্তি রপ্তানিও দেশটির অন্যতম অর্থনৈতিক স্তম্ভ। বিশ্ব ব্যাংকের প্রাক্কলন এই যে ২০১৮–২০ এই দুই অর্থ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতি বছর গড়ে ৬.৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি লাভ করবে।

গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের উর্বর অববাহিকায় অবস্থিত এই দেশটিতে প্রায় প্রতি বছর মৌসুমী বন্যা হয়; আর ঘূর্ণিঝড়ও খুব সাধারণ ঘটনা। নিম্ন আয়ের এই দেশটির প্রধান সমস্যা পরিব্যাপ্ত দারিদ্র গত দুই দশকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রুত, জন্ম নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সফলতা। এছাড়া আন্তর্জাতিক মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ দৃষ্টান্তমূলক অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। তবে বাংলাদেশ এখনো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে যার মধ্যে রয়েছে পরিব্যাপ্ত পরিবারতন্ত্র, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতি, বিশ্বায়নের প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কা। তাছাড়া একটি সর্বগ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থার রূপ নিয়ে নতুন ভাবে সামাজিক বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা প্রচলিত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা ও বিমসটেক-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। এছাড়া দেশটি জাতিসংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা, কমনওয়েলথ অফ নেশনস, উন্নয়নশীল ৮টি দেশ, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলনএবং ওআইসি ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সক্রিয় সদস্য।
বাংলাদেশের ইতিহাস ও বাংলার ইতিহাস
প্রাথমিক ও মধ্যযুগীয় সময়কাল

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর পূর্বে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল। পরবর্তীকালে এই অঞ্চলটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে স্থানীয় ও বিদেশী শাসকদের দ্বারা শাসিত হতে থাকে। আর্য জাতির আগমনের পর খ্রিষ্টীয় চতুর্থ হতে ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত গুপ্ত রাজবংশ বাংলা শাসন করেছিল। এর ঠিক পরেই শশাঙ্ক নামের একজন স্থানীয় রাজা স্বল্প সময়ের জন্য এ এলাকার ক্ষমতা দখল করতে সক্ষম হন। প্রায় একশ বছরের অরাজকতার (যাকে মাৎসন্যায় পর্ব বলে অভিহিত করা হয়) শেষে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজবংশ বাংলার অধিকাংশের অধিকারী হয়, এবং পরবর্তী চারশ বছর ধরে শাসন করে। এর পর হিন্দু ধর্মাবলম্বী সেন রাজবংশ ক্ষমতায় আসে। দ্বাদশ শতকে সুফি ধর্মপ্রচারকদের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের প্রবর্তন ঘটে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে সামরিক অভিযান এবং যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে মুসলিম শাসকেরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।

১২০৫-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী নামের একজন তুর্কী বংশোদ্ভূত সেনাপতি রাজা লক্ষ্মণসেনকে পরাজিত করে সেন রাজবংশের পতন ঘটান। ষোড়শ শতকে মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসার আগে পর্যন্ত বাংলা স্থানীয় সুলতান ও ভূস্বামীদের হাতে শাসিত হয়। মুঘল বিজয়ের পর ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপিত হয় এবং এর নামকরণ হয় জাহাঙ্গীর নগর।

বাংলায় ইউরোপীয় ব্যবসায়ীদের আগমন ঘটে পঞ্চদশ শতকের শেষভাগ থেকে। ধীরে ধীরে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পলাশীর যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করে। ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দের সিপাহী বিপ্লবের পর কোম্পানির হাত থেকে বাংলার শাসনভার ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে আসে। ব্রিটিশ রাজার নিয়ন্ত্রণাধীন একজন ভাইসরয় প্রশাসন পরিচালনা করতেন। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ভারতীয় উপমহাদেশে বহুবার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এর মধ্যে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত ১৭৭০ খ্রিষ্টাব্দের দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৩০ লাখ লোক মারা যায়।

১৯০৫ থেকে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বঙ্গভঙ্গের ফলে পূর্ববঙ্গ ও আসামকে নিয়ে একটি নতুন প্রদেশ গঠিত হয়েছিল, যার রাজধানী ছিল ঢাকায়। তবে কলকাতা-কেন্দ্রিক রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবীদের চরম বিরোধিতার ফলে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের দেশভাগের সময় ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ধর্ম গরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পুনর্বার বাংলা প্রদেশটিকে ভাগ করা হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অংশভুক্ত হয়; অন্যদিকে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানের অংশভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান করা হয়।১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে ভূমিস্বত্ব সংস্কারের মাধ্যমে জমিদার ব্যবস্থা রদ করা হয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও জনসংখ্যাগত গুরুত্ব সত্ত্বেও পাকিস্তানের সরকার ও সেনাবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানিদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থেকে যায়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বৈরিতার প্রথম লক্ষণ হিসাবে প্রকাশ পায়।পরবর্তী দশক জুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে নেয়া নানা পদক্ষেপে পূর্ব পাকিস্তানে বিক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে। এসময় বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের উত্থান ঘটে, এবং দলটি বাঙালি জাতির প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি ছয় দফা আন্দোলনের সূচনা ঘটে যার মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ স্বাধিকার আদায়। আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে কারাবন্দী করা হয়। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চাপিয়ে আবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়; কিন্তু ঊনসত্তরের তুমুল গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের সামরিক জান্তার পতন ঘটে এবং মুজিব মুক্তি পান।
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ লোকের মৃত্যু ঘটে। এ সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের অসহযোগিতা ও ঔদাসীন্য প্রকট হয়ে ওঠে।

মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও সামরিক সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল-বাহানা করতে থাকে।মুজিবের সাথে গোলটেবিল বৈঠক সফল না হওয়ার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চ গভীর রাতে মুজিবকে গ্রেপ্তার করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের অংশ হিসাবে বাঙালিদের উপর নির্বিচারে আক্রমণ শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই নারকীয় হামলাযজ্ঞে রাতারাতি বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।সেনাবাহিনী ও তার স্থানীয় দালালদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। গণহত্যা থেকে নিস্তার পেতে প্রায় ১ কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মোট জীবনহানির সংখ্যার হিসাব কয়েক লাখ হতে শুরু করে ৩০ লাখ পর্যন্ত অনুমান করা হয়েছে।দুই থেকে চার লক্ষ নারী পাকিস্তানি সেনাদের দ্বারা ধর্ষিত হয়।

আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা ১০ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আমবাগানে অস্থায়ী সরকার গঠন করেন। এর প্রধানমন্ত্রী হন তাজউদ্দিন আহমদ। এই সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৭ এপ্রিল। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ৯ মাস পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরূদ্ধে লড়াই করে। মুক্তিবাহিনী ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভারতের সহায়তায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে। মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা’র কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাকিস্তান বাহিনীর প্রধান জেনারেল নিয়াজী ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে। প্রায় ৯০,০০০ পাকিস্তানি সেনা যুদ্ধবন্দী হিসাবে আটক হয়; যাদেরকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
প্রথম সংসদীয় সময়কাল

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে প্রথমে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা চালু হয় ও শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে দেশব্যাপী দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে শুরুতে মুজিব সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে দেশে নামীয় রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট তারিখে সেনাবাহিনীর কিয়দংশ ও স্বীয় দলের কিছু রাজনীতিবিদের ষড়যন্ত্রে সংঘটিত অভ্যুত্থানে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন।
সংসদীয় সময়কাল ও সামরিক অভ্যুত্থান (১৯৭৫-১৯৯১)
পরবর্তী ৩ মাসে একাধিক অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান চলতে থাকে, যার পরিসমাপ্তিতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্বর জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসেন। জিয়া রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন এবং পরবর্তীকালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম সফরের সময় আরেকটি অভ্যুত্থানে নিহত হন। অতঃপর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের পরবর্তী শাসক জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রক্তপাতবিহীন এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দেশ শাসন করেন। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে তার পতন হয় এবং তিনি ক্ষমতা ত্যাগ করলে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মাধ্যমে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়।

সমসাময়িক সংসদীয় সময়কাল (১৯৯১-বর্তমান)
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়ার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ হতে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দারিদ্র ও দুর্নীতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে তার অবস্থান সমুন্নত রেখেছে।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সরকার গঠন করে এবং খালেদা জিয়া পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হন। তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অতঃপর নানা নাটকীয় পালা বদলের মধ্য দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দিন আহমদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করেন। এই সরকার প্রায় দুই বৎসর ক্ষমতায় থাকে এবং সেনা সমর্থিত সরকার হিসাবে সমালোচিত হয়। তবে ফখরুদ্দিন সরকার ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে। এই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে এবং শেখ হাসিনা পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালে ও ২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনে পুনরায় নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ-নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক মহাজোট সরকার গঠন করে।

ভূগোল
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ২০°৩৪´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০১´ থেকে ৯২°৪১´ দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। দেশটির পূর্ব-পশ্চিমে সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৪৪০ কিলোমিটার এবং উত্তর-উত্তরপশ্চিম থেকে দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিস্তৃতি ৭৬০ কিলোমিটার। দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম দুটি নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র যেখানে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে সেখানেই কালের পরিক্রমায় গড়ে ওঠে পৃথিবীর বৃহত্তম এই ব-দ্বীপ। এই গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র মোহনা অঞ্চলে প্রায় ৩০০০ বছর বা তারও পূর্ব থেকে যে জনগোষ্ঠীর বসবাস, তা-ই ইতিহাসের নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে বর্তমানের স্বাধীন রাষ্ট্র “বাংলাদেশ” রূপে। ভৌগোলিক বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায়, ভারত ও মিয়ানমারের মাঝখানে। এর ভূখণ্ড ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৬০ বর্গ কিলোমিটার (সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক ২০২১ অনুসারে)[৫] অথবা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০২০ অনুসারে) বাংলাদেশের ভূখণ্ডগত সমুদ্রসীমা ১২ নটিক্যাল মাইল (২২.২২ কিমি) এবং অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমা উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল (৩৭০.৪০ কিমি) পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশের পশ্চিম, উত্তর, আর পূর্ব সীমান্ত জুড়ে রয়েছে ভারত। তবে পূর্বে ভারত ছাড়াও মিয়ানমারের (বার্মা) সাথে সীমান্ত রয়েছে; দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ভারতের ৫টি রাজ্য (পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম) এর সাথে বাংলাদেশের আন্তঃর্জাতিক সীমানা রয়েছে। বাংলাদেশের পশ্চিমে রয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য; উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় রাজ্য এবং পূর্বে রয়েছে আসাম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম। বাংলাদেশের স্থল সীমান্তরেখার দৈর্ঘ্য ৪,২৪৭ কিলোমিটার যার ৯৪ শতাংশ (৯৪%) ভারতের সাথে এবং বাকি ৬ শতাংশ মিয়ানমারের সাথে। বাংলাদেশের সমুদ্রতটরেখার দৈর্ঘ্য ৫৮০ কিলোমিটার।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশের কক্সবাজার পৃথিবীর দীর্ঘতম অনবচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতগুলোর অন্যতম।

বাংলাদেশের উচ্চতম স্থান দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের মোদক মুয়াল, সমুদ্রতল থেকে যার উচ্চতা ১,০৫২ মিটার (৩,৪৫১ ফুট) এবং সর্বোচ্চ শৃঙ্গ “বিজয়” (তাজিং ডং)-এর উচ্চতা ১,২৮০ মিটার যা রাঙ্গামাটি জেলার সাইচল পর্বতসারির অন্তর্ভুক্ত। বঙ্গোপসাগর উপকূলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের অনেকটা অংশ জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। এখানে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল (টাইগার) বাঘ, চিত্রা হরিণ সহ নানা ধরনের প্রাণীর বাস। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এই এলাকাকে বিলুপ্তির সম্মুখীন বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রশাসনভিত্তিক ভৌগোলিক বিভাজন
বাংলাদেশ ৮টি প্রশাসনিক বিভাগে বিভক্ত। এগুলো হল: ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর এবং ময়মনসিংহ। প্রতিটি বিভাগে রয়েছে একাধিক জেলা। বাংলাদেশের মোট জেলার সংখ্যা ৬৪টি। জেলার চেয়ে ক্ষুদ্রতর প্রশাসনিক অঞ্চলকে উপজেলা বলা হয়। সারাদেশে ৪৯৫টি উপজেলা (সর্বশেষ ৩টি নতুন উপজেলা ঘোষণা করা হয়) রয়েছে। বাংলাদেশে মোট ৪,৫৫৪টি ইউনিয়ন; ৫৯,৯৯০টি মৌজা এবং ৮৭,৩১৯টি গ্রাম রয়েছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনে কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নেই; সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন বা পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়।
এছাড়া শহরাঞ্চলে ১২টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) এবং ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলোর সবগুলোতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। রাজধানী ঢাকা বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য শহরের মধ্যে রয়েছে – চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, রংপুর, যশোর, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফেনী,নাটোর, বগুড়া ও দিনাজপুর।

Bangladesh some important photos Education system


সরকার ব্যবস্থা
বাংলাদেশের সংবিধান ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত হয়। পরবর্তীকালে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। এছাড়াও, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নির্বাচনের পূর্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি চালু হয় যা ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সংশোধনক্রমে সংবিধানে গৃহীত হয়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ৯ম জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনের পূর্বে কেয়ারটেকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হত। এ সময় সরকারি ক্ষমতা নিয়ন্ত্রিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ উপদেষ্টামণ্ডলীর মাধ্যমে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন মর্মে সংবিধানে প্রবিধান রয়েছে। সংসদীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়।[১০৩] ২০১১-এ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনপূর্ব নিদর্লীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের পদ্ধতি বাতিল করা হয়। আবার, ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতিদের অভিশংসন প্রথা চালু হয়। প্রধান বিচারপতিদের ইচ্ছে করলে সংসদ অভিশংসন করতে পারবে। আর ২০১৮ সালে সংবিধানের সপ্তদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জাতীয় সংসদে শুধুমাত্র নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০টি আসনের মেয়াদ আরও ২৫ বছর বৃদ্ধি করা হয়।

রাষ্ট্রপতি এদেশের আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান। তার সীমিত ক্ষমতা রয়েছে; কেননা কয়েকটি ক্ষেত্র ব্যতীত প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিতে তিনি সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। জাতীয় সংসদের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন পাঁচ বছর মেয়াদের জন্য। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের মূল ক্ষমতার অধিকারী হলেন প্রধানমন্ত্রী, যিনি “সরকার প্রধান” হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সংসদ সদস্য হতে হয়। মন্ত্রিসভার মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত এবং রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হলো বাংলাদেশ সচিবালয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন কার্যাবলী পরিচালনার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিযুক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীরা মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী পদমর্যাদায় বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছেন। উপদেষ্টামণ্ডলী মন্ত্রী সভার বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে সরকার গঠনের পরও প্রধানমন্ত্রীর চার জন উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করেন একজন স্থায়ী সচিব। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে ৪১টি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বড় মন্ত্রণালয়, যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়, একাধিক “বিভাগ”-এ বিভক্ত। প্রতিটি জেলা এবং উপজেলায় সরকারি প্রশাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা। মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ নীতিমালা প্রণয়ন যা বিভিন্ন সংযুক্ত বিভাগ, সংস্থা, বোর্ড, কমিশন, একাডেমী প্রভৃতির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির জন্য পৃথক কার্যালয় রয়েছে। ২০১১-এর হিসাবে দেখা যায়, সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ১১ লাখ ৮২ হাজার ৭৬৫। এর বাইরে শূন্যপদ রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। কর্মরতদের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর সংখ্যা ১ লাখ ১৯ হাজার ৫২২, দ্বিতীয় শ্রেণীর ৭৩ হাজার ৩২১, তৃতীয় শ্রেণীর ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১১ এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬১১ জন।
সুপ্রিম কোর্ট বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর দুটি স্তর রয়েছে যথা হাইকোর্ট ডিভিশন (উচ্চ আদালত বিভাগ) ও অ্যাপিলাত ডিভিশন (আপিল বিভাগ)। রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। দেশের আইন-কানুন অনেকটা প্রচলিত ব্রিটিশ আইনের আদলে প্রণীত। তবে বিবাহ এবং উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনগুলো ধর্মভিত্তিক। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে প্রশাসন থেকে পৃথক করা হয়েছে।
শিক্ষা
বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার ক্রমবর্ধমান। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ৪১ শতাংশ। ইউনিসেফের ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবে পুরুষদের মধ্যে স্বাক্ষরতার হার ৫০ শতাংশ এবং নারীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালে দেশে সাক্ষরতার হার ছিল ৫২ শতাংশ। চার বছর পর ২০১৩ সালে ২১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে তা ৭১ শতাংশ হয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তা আরও বৃদ্ধি লাভ করে ৭২.৭৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাংশ। ২০০৭ এর তুলনায় সাক্ষরতার হার ২৬.১০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালে সাক্ষর নারী ছিল জনসংখ্যার ৫২.২ শতাংশ এবং পুরুষ ৬১.৩ শতাংশ। ২০১৬ তে সাক্ষর নারীর হার ৬৯.৯০ শতাংশে এবং সাক্ষর পুরুষের হার ৭৫.৬২ শতাংশে উন্নীত হয়। সরকার বাস্তবায়িত বিবিধ সাক্ষরতা কর্মসূচীর ফলে দেশে শিক্ষার হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রবর্তিত শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচী সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। এছাড়া মেয়েদের শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রবর্তিত বৃত্তি প্রদান কর্মসূচী নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিচ্ছে।২০১৮ সালে শিক্ষামন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী দেশে সাক্ষরতার হার ৭২.৯ শতাতম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্টাটিসটিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে শিক্ষার হার বর্তমানে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল ভবন

বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা তিন সারির এবং বহুলাংশে ভর্তুকিপুষ্ট। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের বহু বিদ্যালয়ের পরিচালনা ব্যয় সর্বাংশে বহন করে। সরকার অনেক ব্যক্তিগত স্কুলের জন্য অর্থায়ন করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা খাতে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মাধ্যমে ১৫টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থায়ন দিয়ে থাকে। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সরকার মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করে আসছে। শিক্ষা বছরের প্রথম দিনের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে নতুন ক্লাসের বই তুলে দেয়ার ঐতিহ্য প্রবর্তিত হয়েছে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় তিন পদ্ধতি প্রচলিত। প্রথমত সাধারণ পদ্ধতির স্কুলগুলোতে সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসৃত হয়। এসব স্কুলে শিক্ষাপ্রদানের ভাষা বাংলা। দ্বিতীয়ত রয়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এগুলোতে পশ্চিমা পাঠ্যক্রম অনুসরণ করা হয়। তুলনামূলকভাবে সীমিত সংখ্যক হলেও উচ্চ মানের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এই স্কুলগুলো প্রসিদ্ধ। তৃতীয়ত রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা। শেষোক্ত শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষা। তবে ভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, ব্যবসায় ইত্যাদি সকল বিষয়ও পাঠ্য।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে তিনভাগে ভাগ করা যায়: সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে ৩৭টি সরকারি, ৮৩টি বেসরকারি এবং দুটো আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় চালু রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় বৃহত্তম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত) প্রাচীনতম। এছাড়াও প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি-র একটি অঙ্গসংগঠন, এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং দক্ষিণ আমেরিকা উপমহাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন এশিয়ার ১৪টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছে। ফ্যাকাল্টির সদস্যবৃন্দ এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি স্থানের বিখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছেন।[৯২] বুয়েট, রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট, বুটেক্স এবং ডুয়েট দেশের ছয়টি সরকারি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কিছু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিও বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের মধ্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য।
বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ শুরু হয়। এর ফলে ব্যক্তিখাতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হতে শুরু করে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ বাংলাদেশে ব্যক্তিখাতে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৮টি।